
কলতাসুতী রাস্তায় চরম দুর্ভোগ, মরিচ কাঁটা এলাকায় পায়ে হাঁটা দায়।
রাস্তা সংস্কার হয়নি বছরজুড়ে, যানবাহন চলাচল বন্ধ, কৃষক-শিক্ষার্থী ও রোগীরা সবচেয়ে বেশি বিপদে।
আমিনুল ইসলাম, সাভার উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের কলতাসুতী এলাকার জনগণ আজ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছেন। বছরের পর বছর ধরে সংস্কারবিহীন ভাঙাচোরা, কর্দমাক্ত রাস্তাগুলো এখন এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, যানবাহন তো দূরের কথা, পায়ে হেঁটে চলতেও প্রাণান্তকর কষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত মরিচ কাঁটা, বড় টেক, নামাপাড়া ও কলতাসুতী গ্রামের কয়েক হাজার মানুষ।
স্থানীয় জনগণ জানান, রাস্তাগুলোর জরিপ ও মাপঝোঁক একাধিকবার করা হলেও এখন পর্যন্ত কোন কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। মাঝে মাঝে অল্প কিছু কাজ শুরু হলেও তা অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে। সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছে মরিচ কাঁটা গ্রামের রাস্তা। সেখানে যানবাহন চলাচল একেবারে বন্ধ। কাদা, গর্ত আর ভাঙাচোরা রাস্তা পেরিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে।
এই এলাকার মানুষ বাড়ি ভাড়ার উপর নির্ভরশীল,রাস্তা খারাপ বিধায় বাড়িওয়ালাদের বাসার ভাড়াটিয়া চলে যাচ্ছে,সঠিক সময়ে অফিসে পৌছাতে না পারাতে অনেকের চাকরিও চলে যায়।এছাড়াও এলাকায় কৃষক যতটুকু কৃষি কাজ করে ঘরে ফসল তোলার জন্য চেষ্টা করে, সেইটাও করতে পারে না, যাতায়াতের রাস্তা খারাপ বিধায় ফসল ঘরে তুলতে যানবাহন ব্যবহার করতে পারে না কৃষক। পাড়া মহল্লার ভিতরে যেসমস্ত দোকান রয়েছে, মালামাল সাপ্লাই দিতে পারে না রাস্তা খারাপ যান বাহন প্রবেশ করতে পারে না।
বিদ্যালয়গামী শিশুদের জন্য এই রাস্তা যেন এক দুঃস্বপ্ন। বৃষ্টির দিনে তারা পা পিছলে পড়ে যায়, জামাকাপড় কাদায় ভিজে যায়।
স্থানীয় এক শিক্ষার্থী বলে,প্রায়ই সময়মতো স্কুলে যেতে পারি না। জুতো খুলে কাদা পাড়ি দিতে হয়।
রোগী পরিবহনে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়। অ্যাম্বুলেন্স বা ভ্যান পৌঁছাতে না পারায় স্থানীয়রা স্ট্রেচারে তুলে রোগী নিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন বহু দূর।
গ্রামের বাসিন্দা জানান,আমার বাবার স্ট্রোক হয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্স ঢুকতে না পারায় ৮ জন মিলে স্ট্রেচারে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল। দুই ঘণ্টা দেরি হয়ে যায়। রাস্তাটা ভালো থাকলে হয়তো সময়মতো চিকিৎসা পেতেন।
বর্ষাকালে রাস্তা কাদা আর পানি জমে যায়। হাঁটু পানি পার হয়ে চলতে হয় মানুষকে। শুকনো মৌসুমে আবার উড়তে থাকে ধুলোর ঝড়। এতে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, চোখে সমস্যা দেখা দেয়। শিশু ও বৃদ্ধদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, তারা বারবার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় প্রশাসনের কাছে গেছেন। রাস্তা পরিমাপ, জরিপ, এমনকি প্রকল্প অনুমোদনের কথাও শোনা গেছে। কিন্তু কোনো কাজ শুরু হয়নি।
মরিচ কাঁটা এলাকার বাসিন্দা রাজিব দেওয়ান, আনোয়ার ও সোহেল জানান,রাস্তার কাজ হবে বলেই চলছে গত ৫ বছর ধরে। শুধু মাপঝোঁক করে গেছে। আমাদের ভোট দরকার হলে সবাই আসে, কাজের সময় কেউ থাকে না।মরিচ কাঁটা, বড় টেক, নামাপাড়া ও কলতাসুতী এলাকার রাস্তাগুলোর পূর্ণাঙ্গ সংস্কার।জরুরি ভিত্তিতে কাদা ও গর্তে মাটি ও খোয়ার ফেলে সাময়িক চলাচলের ব্যবস্থা।রাস্তার উন্নয়ন কাজ দ্রুত শুরু এবং যথাযথ তদারকি নিশ্চিত করা।প্রকল্প বাস্তবায়নে এলাকাবাসীর মতামত ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
এই জনপদে প্রতিদিন দুর্ভোগ সঙ্গী করে চলতে হয় মানুষকে। স্কুলে যাওয়া, হাসপাতালে পৌঁছানো, বাজারে যাতায়াত সবকিছুতেই চরম ভোগান্তি। অথচ উন্নয়নের আশ্বাস দিয়ে চলছে বছরজুড়ে নানান রাজনৈতিক প্রচারণা।এখন এলাকাবাসীর একটাই প্রশ্ন কবে মিলবে রাস্তাটুকু?তাদের একটাই দাবি আর দেরি নয়, এবার বাস্তব পদক্ষেপ চাই।