
মো.আমিনুল ইসলাম:-
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ(ইউপি)নির্বাচনে শিমুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীদের প্রতি স্থানীয় সচেতন মহল আহ্বান জানিয়েছেন, যেন তারা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে না জড়িয়ে সরাসরি জনগণের দ্বারে দ্বারে গিয়ে পরিচিতি ও জনভিত্তি গড়ে তোলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মতে, নির্বাচন কেবলমাত্র পোস্টার-ব্যানার কিংবা দলীয় পরিচয়ে জেতা সম্ভব নয় বরং জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করাই হবে সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
ইতোমধ্যে ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীদের আগমন ও তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কেউ কেউ সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে জনগণের হৃদয় জয় করার চেষ্টা করছেন, আবার কেউ মাঠপর্যায়ে ঘুরে ঘুরে নিজের পরিচয় তুলে ধরছেন। তবে একইসঙ্গে কিছু প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা ধরনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড ও দ্বন্দ্বে জড়ানোর অভিযোগও উঠেছে, যা সাধারণ ভোটারের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করছে।
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আলী হোসেন বলেন, আমরা এমন একজন চেয়ারম্যান চাই, যিনি শুধু নির্বাচনের সময় নয়, সব সময় জনগণের পাশে থাকবেন। ভোট নিতে হলে এখন থেকেই প্রার্থীদের মাঠে নামতে হবে, মানুষের সুখ-দুঃখ জানতে হবে। কে কোন দলে সেটার চেয়ে বড় বিষয় হলো কে কতটা জনসেবামূলক মনোভাব রাখেন।
অন্যদিকে, ইউনিয়নের তরুণ সমাজ এবং প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাওয়া তরুণ ভোটাররাও বলছেন, তাঁরা এমন প্রার্থীকে সমর্থন করবেন যিনি দুর্নীতিমুক্ত, আধুনিক চিন্তাধারার এবং ইউনিয়নের সার্বিক উন্নয়নে সক্ষম।
জনগনের মতে, আগেভাগে জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা, বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিচিত হওয়া এবং নিজের ভিশন ও মিশন তুলে ধরার মাধ্যমেই একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করা সম্ভব। আর এ ভাবমূর্তিই পরবর্তীতে নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করতে পারে।
শিমুলিয়া ইউনিয়নে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল এখনো ঘোষণা না হলেও সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে আগ্রহ ও প্রস্তুতি ইতোমধ্যে চোখে পড়ছে। আশা করা হচ্ছে, একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং জনগণের অংশগ্রহণে ভরপুর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের বর্তমান পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক গণসংযোগ শুরু করেছেন। কেউ সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন, কেউ দরিদ্রদের মাঝে সহায়তা বিতরণ করছেন, আবার কেউ নিরবে ঘরে ঘরে ঘুরে নিজের পরিচয় ও ভাবনা তুলে ধরছেন জনগণের সামনে। এতে নির্বাচনী উত্তাপ ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে।
স্থানীয়দের একাংশ মনে করেন, গত কয়েক দফার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় কোন্দল, পেশীশক্তি, এবং অর্থের প্রভাব প্রার্থীদের জনপ্রিয়তার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছিল। এবার তারা চান ভিন্ন কিছু। চান একজন এমন চেয়ারম্যান, যিনি হবেন জনগণের বন্ধু, দুর্নীতিমুক্ত এবং উন্নয়ন মনস্ক।
শিমুলিয়া বাজারের এক ব্যবসায়ী, আব্দুল হাকিম বলেন,প্রার্থীরা অনেকেই আসছেন, কথা বলছেন। কিন্তু আমরা দেখতে চাই কার ভিতরে সত্যিকারের নেতৃত্বের গুণ আছে। ইউনিয়নের রাস্তা, খাল-বিল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, স্বাস্থ্যসেবা সব জায়গায় উন্নয়ন দরকার। যে এই দায়িত্ব নিতে পারবেন, তাকেই আমরা ভোট দিতে চাই।প্রার্থীরা যেন শুধু ভোটের সময় নয়, সব সময় জনগণের পাশে থাকেন। আমরা চাই যারা প্রার্থী হবেন তারা এখন থেকেই আমাদের কথা শুনুন, সমস্যার সমাধানে পাশে থাকুন।
এবারের নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন কয়েকজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ ও সাবেক জনপ্রতিনিধি, পাশাপাশি রয়েছেন সমাজকর্মী, তরুণ উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন পেশার মানুষ। অনেকে আবার রাজনীতিতে একেবারে নতুন হলেও সমাজসেবার মাধ্যমে জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে চেষ্টা করছেন।আমি দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবা করছি। এবার মনে করছি, নির্বাচিত হয়ে আরও বৃহৎ পরিসরে কাজ করতে পারব। আমি বিশ্বাস করি, জনগণের আস্থা অর্জনের জন্য তাদের পাশে দাঁড়ানো ছাড়া অন্য কোনো পথ নেই।
তবে কিছু এলাকায় দেখা গেছে নির্বাচনের আগেই কোন্দল, পোস্টারবাজি ও সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচারের প্রবণতা। এ বিষয়ে সচেতন মহলের দাবি এমন আচরণ প্রার্থীদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
স্থানীয় শিক্ষকরা বলেন,এখনকার জনগণ অনেক সচেতন। তারা জানে কে কীভাবে কাজ করেছে, কে শুধু নির্বাচনের সময় আসে আর কে সারা বছর পাশে থাকে। তাই জনপ্রিয়তা বাড়াতে হলে প্রার্থীদের উচিত হবে সঠিকভাবে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরা, এলাকাভিত্তিক সমস্যা নিয়ে কাজ করা এবং কোনো বিতর্ক বা নেতিবাচক প্রচারণা এড়িয়ে চলা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমও এখন বড় ভূমিকা রাখছে। একজন প্রার্থী চাইলে ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিজের পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেন যেটা তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করবে।
স্থানীয় নির্বাচন অফিস সূত্রে জানা গেছে, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচন আয়োজনে যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা হবে। অবৈধ প্রভাব ও সহিংসতা ঠেকাতে কঠোর নজরদারির আশ্বাস দিয়েছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তারা।
শিমুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন দূরে হলেও মাঠ ইতোমধ্যে গরম হয়ে উঠেছে। জনগণের প্রত্যাশা এবার যেন একজন সৎ, কর্মঠ ও জনবান্ধব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন, যিনি এলাকার সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে কাজ করবেন। প্রার্থীদের প্রতি বারবারই আহ্বান জানানো হচ্ছে বিতর্ক নয়, গঠনমূলক জনসংযোগেই হোক আপনাদের নেতৃত্বের ভিত্তি।